Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Classic Header

{fbt_classic_header}

Top Ad

//

New Post:

latest

ইংরেজি কেন আন্তর্জাতিক ভাষা?

বর্তমান  সময়ে প্রত্যেকটা মানুষের কাছে সবচাইতে দামি ভাষা হচ্ছে ইংরেজি। ভালো কোথাও চাকরি করতে হলে আপনাকে ইংরেজি জানত হবে। •আসলে এই ইংরেজি ভাষ...

বর্তমান  সময়ে প্রত্যেকটা মানুষের কাছে সবচাইতে দামি ভাষা হচ্ছে ইংরেজি। ভালো কোথাও চাকরি করতে হলে আপনাকে ইংরেজি জানত হবে।

•আসলে এই ইংরেজি ভাষা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?।

•ইংরেজি ভাষা কিভাবে আন্তর্জাতিক ভাষা হলো? অন্য কোন ভাষাকে কেন আন্তর্জাতিক ভাষা করা হলো না?

•কখনো ‌ইংরেজি ছাড়াও অন্য কোন ভাষাকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হতো কিনা

•ইতিহাসে একটু খুঁজাখুজী করলে দেখা যায় এর শুরুটা ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অত্যাচার থেকে।

১৯২২ সালের দিকে, পৃথিবীর সবচাইতে বেশী জায়গায় দখল করে রেখেছিল ব্রিটিশরা। পুরু পৃথিবীর প্রায় ২৫% জায়গা কব্জা করে রেখেছিল তারা। এদের মধ্যে কয়েকটি দেশ, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আফ্রিকার মধ্যে অনেক গুলো দেশ। এরপর ইউএস থেকে কানাডা পর্যন্ত। এই সবগুলো দেশ ব্রিটিশদের কন্ট্রোলে ছিল। মানে সর্বমোট ৪৫০ মিলিয়নের মতো মানুষ ব্রিটিশদের কন্ট্রোলে ছিল।

ইংরেজি কেন আন্তর্জাতিক ভাষা?


এতগুলো মানুষকে ব্রিটিশরা ঔপনিবেশিক করে রেখেছিল। এদের মধ্যে যারা উপনিবেশে বসবাস রত ছিল, তাদের ভালো চাকরি কিংবা বড় কিছু করতে হলে, তাদের জন্য ইংরেজি শিখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এর জন্য এই সব উপনিবেশিত দেশগুলোতে ইংরেজিকে অভিজাত ভাষা মানা হতো। 

•কিন্তু ধিরে ধিরে ব্রিটিশদের এই শাসনের সমাপ্তি ঘটেতে লাগলো।
১৯৫০ সাল আসতে আসতে বেশির ভাগ উপনিবেশ দেশগুলো স্বাধীন হয়ে উঠেছিল। যার  কারণে এই দেশগুলো স্বাধীনতা পাওয়া শুরু করলো। কিন্তু স্বাধীনতা পাওয়ার পরও এর মধ্যে কিছু দেশগুলোতে ইংরেজিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হিসেবেই রাখা হলো। 

•প্রত্যেকটা দেশে এর আলাদা আলাদা কিছু কারণ ছিল।
পাশের দেশ ইন্ডিয়ার একটি উদাহরণ নেওয়া যাক।যখন ইন্ডিয়ার সংবিধান লেখা হচ্ছিল তখন গণপরিষদ এটা নিয়ে ব্যাপক চিন্তা করছিল। ইংরেজি কে একটি অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা ঠিক হবে নাকি শুধু হিন্দি ভাষাকে একটি জাতীয় ভাষা বানানো হবে। এখানে অনেক লোক চেয়েছিল হিন্দুস্থানী ভাষাকে(হিন্দি এবং উর্দুর মিক্সড ল্যাংগুয়েজ) জাতীয় ভাষা বানাতে। কিন্তু এরমধ্যে কিছু মানুষ চেয়েছিল, ইংরেজি ভাষা কে একটি অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে রাখতে। 

তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ডাঃ বিআর আমব্রেটকর। তিনি মনে করতেন দলিত কমিউনিটিকে ভালোভাবে উপস্থাপন করার জন্য, ইংরেজি ভাষা সবচাইতে বেস্ট হবে।
তিনি বলতেন , ভারতে সকল দলের দিকে তাকালে, ইংরেজি এমন একটি ভাষা, যা সকল দলকে সমান সুবিধা দিতে পারবে। এর মাধ্যমে কোন দল অতিরিক্ত সুবিধা পাবে না।
ইনি এর একটি উদাহরণ হিসেবে বলছেন, যদি সংস্কৃতি হিন্দি কে জাতীয় ভাষা বানানো হয়, তাহলে ব্রাহ্মণ বেশি সুবিধা পাবে।
এছাড়াও তখন সাউথ ইন্ডিয়ান লিডারও এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি মনে করতেন, যেহেতু হিন্দি একটি উত্তর ভারতীয় ভাষা,তাই এটা জাতীয় ভাষা হয়ে গেলে সাউথ ইন্ডিয়া নিজেদেরকে অনেকটা পরাধীন মনে করবে।
•এরজন্য সিদ্ধান্ত নেয়াও হয় ভারতে ২টি জাতীয় ভাষা থাকবে। হিন্দি এবং ইংরেজি।
এখানে আমেরিকার ইতিহাস দেখলে, সেটাও অনেকটা এরকমই। আমেরিকার উপরেও অনেক গুলো দেশ উপনিবেশ করেছিল। ব্রিটেন , ফ্রান্স, স্পেন, নেডারল্যান্ড। কিন্তু এর একটি প্রধান অংশ ছিল ব্রিটেনের কাছে। এরজন্য যখন আমেরিকা ব্রিটিশদের থেকে মুক্তি পায়, তখন তারা ভাবে তাদের জন্য একটি জাতীয় পরিচয় থাকা খুবই জরুরি। আর এখানে ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিল এই ভাষা হবে ইংরেজি। যা আমাদের সকল রাজ্য গুলো কে এক করে রাখবে।
শুনে আপনার অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে।
ইউএসএ তে তখন ভিন্ন ভিন্ন অনেক ভাষা ব্যবহার করা হতো। ফ্রেন্চ, স্পেনিশ, ডাচ, জার্মান। কিন্তু ইংরেজি কে এখানে অগ্রাধিকার দেওয়া হলো।

ইংরেজি কেন আন্তর্জাতিক ভাষা?

এখানে অগ্রাধিকারের পরিমাণ এতটা বেশি হয়ে গিয়েছিল যে, ২০ শতকের শুরুর দিকে, অনেক গুলো রাজ্যের স্কুল গুলোতে, অন্যান্য ভাষা শেখানো বন্ধ করে দিয়েছিল।
এতক্ষণ আপনারা যে ইতিহাস গুলি জানলেন, তারমাধ্যমে এটা তো বুঝা গেল, ব্রিটিশরা যে সকল দেশে কব্জা করে রেখেছিল, সেইসব দেশে কেন ইংরেজি এত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাকি যে দেশ গুলো রয়েছে,তাদের উপর তো কেও চাপ সৃষ্টি করেনি ইংরেজি ভাষায় কথা বলার জন্য। এরপরও ইংরেজি কিভাবে বাকি দেশগুলোতে ছড়িয়ে গেল।
এর উত্তর লোকিয়ে আছে , পেছনের ৬০ থেকে ৭০ বছর পূর্বের ইতিহাস গুলোতে।
২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় Allied Country গুলো Axis County গুলো কে পরাজিত করেছিল।
Allied মানে হলো ব্রিটেন, আমেরিকা এবং ফ্রান্সের মতো দেশগুলো জার্মানি, জাপান এবং ইতালির মাতো দেশ গুলোকে পরাজিত করেছিল।
এখানে প্রথম পয়েন্ট হলো যে দেশ গুলো এরকম বড় যুদ্ধে বিজয় হয়, তাদের সংস্কৃতি পৃথিবীতে রাজত্ব করে।
ব্রিটেন এবং ইউএসএতে ইংরেজিতে কথা বলা হতো ,আর তারাই পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তার করে।
এছাড়াও আর একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আছে এখানে,
২য় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়া পর ইউএসএ একমাত্র দেশ ছিল, যাদের বেশি একটা ক্ষতি হয়নি। বাকি সকল উন্নত দেশগুলোর মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল।তাদের অর্থনৈতিক অবনতি ঘটেছিল। কিন্তু আমেরিকার ক্ষেত্রে  সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনা ঘটে।‌ ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটেছিল
১৯৫০ সালের পর আমেরিকা একটি সুপার পাওয়ারফুল দেশে পরিণত হয়। পুঁজিবাদের সাহায্যে, আমেরিকান ব্যবসা সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে যায়। পৃথিবীর শীর্ষ ব্যাবসায়ীক স্কুলগুলোতে ইংরেজিতে পড়ানো শুরু হয়। বাণিজ্য এবং ব্যাবসার ক্ষেত্রে, ইংরেজি আলাদা একটি ভাষায় পরিণত হলো। আমেরিকার মিউজিক্যাল ব্যান্ড গুলো নিজেদের কাজগুলো ইংরেজিতে পুরো পৃথিবীতে ছড়াতে লাগলো,
ঠিক একই বিষয় ঘটলো চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও। আমেরিকার মুভি গুলো সারা বিশ্বে দেখা শুরু হলো। ফলে তাদের সংস্কৃতি গুলো অতি সহজে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লো।
এই সবগুলো ঘটনার পেছনে ২য় বিশ্বাযুদ্ধকে মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়। কারণ অনেকে মনে করেন, যদি জার্মানি এবং Axix পাওয়ারের দেশ গুলো ২য় বিশ্বযুদ্ধে জয়ী হতো, তাহলে বর্তমানে জার্মানি ভাষা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পরতো। তাহলে বিশ্বব্যাপি বাণিজ্য এবং ব্যাবসা গুলো জার্মানি ভাষায় পরিচালিত হতো। কারন ইউরোপের বেশিরভাগ জায়গায়  জার্মানি ভাষা জুরপুর্বক ঢুকানো হতো, যদি এডঅফ হিটলার বিজয় হতো।
কিন্তু এমেরিকা এবং ব্রিটিশদের বিজয়ের কারণে আজ ইংরেজি এত শক্তিশালী ভাষা হিসেবে পরিণত হয়।
এখানে সর্বশেষ আরএকটি কারন রয়েছে, বিশেষ করে ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালেও পর ইংরেজি কিভাবে এত দ্রুত ছড়িয়ে গেল।
এর প্রধান কারণ ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের আবিষ্কার আমেরিকাতে হওয়ার জন্য। ইন্টারনেটের সাথে সম্পৃক্ত সকল কোম্পানি গুলো আমেরিকাতে চালু হলো। গুগল, ফেইসবুক, মাইক্রোসফ্ট এবং এ্যপল। এই সবগুলো জনপ্রিয় কোম্পানি গুলো ইন্টারনেট এর মাধ্যমে আমেরিকাতেই এসেছে। আর এর কারনে বর্তমানে সকল ওয়েব সাইট গুলোর মধ্যে ৬৩% ওয়েব সাইট এর কন্টেন্ট গুলো ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়।
এবং এর সাথে সাথে কম্পিউটার এর আবিষ্কার এরপর কিবোর্ড এর আবিষ্কার। এই সবগুলো সর্বপ্রথম আমেরিকাতেই হয়।
যার কারনে আজ বর্তমানে ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে পরিণত হয়। কিন্তু ইংরেজি কি সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক ভাষা?
এতক্ষণ আপনারা যে ইতিহাস জানলেন, তা ব্রিটিশ শাসনের পর থেকে শুরু হয়। কিন্তু এর পূর্বে কি হতো।   কখনো কি ইংরেজি ভাষার পূর্বেও অন্য কোন ভাষা আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ব্যাবহার হয়েছে? এর জবাব হলো হলো হ্যা। হয়েছে। ২টি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা ছিল। যা পূর্বে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হতো।আর এই দুই ভাষা হলো গ্রিক ও ল্যাটিন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভাষাগত শিক্ষক বলেন, ল্যাটিন পৃথিবীর সর্বপ্রথম রেকর্ড করা আন্তর্জাতিক ভাষা। এটা ইংরেজির থেকেও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে টিকে ছিল। ১৩০০ বছর ধরে এই ভাষা কে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
রোমাণ সম্রাজ্যের সময় বেশিরভাগ পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে ল্যাটিন একটি প্রধান ভাষা ছিল। কিন্তু রোমান সাম্রাজ্যের সমাপ্তির পর ল্যাটিন ভাষা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা দেশে এটাকে আলাদা আলাদা ভাবে ব্যাবহার করা হতো।যার মাধ্যমে বর্তমান সময়ের অনেক ভাষার সৃষ্টি হয়েছে। স্পেনিশ, পর্তুগিজ, ফ্রান্স এবং ইতালির মতো বড় বড় ভাষা গুলো ল্যাটিন ভাষা থেকে এসেছে।
আরেকদিকে এশিয়ার কথা বললে, এশিয়াতে আরবি, চাইনিজ,আর ফারসি ভাষাগুলো উপনিবেশিত ভাষা হিসেবে ছিল। তখন এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভাষা ছিল। এটা ছিল ১৫ শতাব্দীর সময়ের দিকে।
যার কারণে বর্তমানে ইংরেজিতে যেমন অনেক শব্দ ব্যাহার হয়, তেমনি আরবী অনেক শব্দ বাংলায় আমরা ব্যাবহার করি।
এই বিষয়গুলোর মাধ্যমে আমরা জানলাম। ইংরেজি কেন আন্তর্জাতিক ভাষা। উপনিবেশিত শাসন এবং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ইংরেজি ভাষাভাষিদের দখলে থাকায় ইংরেজি আজ আন্তর্জাতিক ভাষা।
এখন বর্তমানে ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ভাষা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা হওয়ার মূল কারণ ২য় বিশ্বযুদ্ধ, তাই কখনো ৩য় বিশ্বযুদ্ধ হলে। আর সেখানে আমেরিকাকে অন্য ভাষার কোন দেশ পরাজিত করতে পারলে, আমূরিকার ক্ষমতাকে তপকাতে পারলে । তখন তাদের রাজ্য চলবে। তাদের ভাষাই তখন আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার হবে। তাদের পোশাক বিশ্বজুড়ে আধুনিক পোশাক হিসেবে বিবেচিত হবে।
আশা করি বিষয় গুলো বুঝতে পেরেছেন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক ভাবে বুঝার ও জানার তৌফিক দান করুক। আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওবারাকাতুহ।

কোন মন্তব্য নেই