Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Classic Header

{fbt_classic_header}

Top Ad

//

New Post:

latest

হযরত ইদরিস আলাইহিস সালাম এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

হযরত ইদরিস আ. হলেন কুরআনে বর্ণিত মহান পয়গাম্বরদের একজন। মহাগ্রন্থ আলকুরআনে আল্লাহ তা'লা হযরত ইদরিস আ.-এর অনেক প্রশংসা করেছেন। তাকে সত্যব...

হযরত ইদরিস আ. হলেন কুরআনে বর্ণিত মহান পয়গাম্বরদের একজন। মহাগ্রন্থ আলকুরআনে আল্লাহ তা'লা হযরত ইদরিস আ.-এর অনেক প্রশংসা করেছেন। তাকে সত্যবাদী, ধৈর্যশীল, উঁচু মাকামের অধিকারী এবং আল্লাহর মনোনীত পয়গাম্বর হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

হযরত ইদরিস আলাইহিস সালাম এর সংক্ষিপ্ত জীবনী


ঐতিহাসিক বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত আছে যে, হযরত ইদরীস (আ.) হলেন পৃথিবীর প্রথম মানব, যাঁকে মু‘জেযা হিসাবে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও অংকবিজ্ঞান দান করা হয়েছিল। তিনিই সর্বপ্রথম আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী কলমের সাহায্যে লিখন পদ্ধতি ও বস্ত্র সেলাই করে পরিধান করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর পূর্বে মানব জনগোষ্ঠী সাধারণতঃ পোশাক হিসাবে জীবজন্তুর চামড়া ব্যবহার করত। তাছাড়া ওযন ও পরিমাপের পদ্ধতি এবং লোহা দ্বারা অস্ত্র-শস্ত্র তৈরীর কলাকৌশল তিনিই সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন। আর এগুলোর ব্যবহারও তাঁর আমল থেকেই শুরু হয়। তিনি অস্ত্র-শস্ত্র নির্মাণ করে তৎকালীন সময়ে অবাধ্য ক্বাবীল সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জেহাদ করেন।

ঐতিহাসিকদের বর্ণনা মতে ক্বাবীল সম্প্রদায়ের হেদায়েতের জন্য পৃথিবীতে তাঁর কাছেই সর্বপ্রথম স্বশরীরে হযরত জিবরীল আ. ওহী নিয়ে অবতরণ করেন। ( সুত্র- মাআল আম্বিয়া ফিল কুরআনিল কারীম)

আলবেদায়া ওয়ান নেহায়া গ্রন্হে উল্লেখ আছে ; হযরত আদম আলাইহিস সালাম এবং হযরত শীস আলাইহিস সালামের পরে তিনিই প্রথম আদম সন্তান যাকে নবুওত দান করা হয়েছিল। তাঁর কাছে ত্রিশ খানা ছহীফা নাযিল করা হয়েছিল।

তিনি বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের বংশ লতীকার অন্যতম স্তম্ভ। ইমাম যাহাবী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্হ "সিয়ারু আ'লামিন নুবালা" তে ঐতিহাসিক মুহাম্মদ বিন ইসহাকের বরাতে উল্লেখ করেন; হযরত ইদরিস আ. -এর আসল নাম হলো "আখনূখ" আর আদম আ. পর্যন্ত তাঁর বংশাধারা হলোঃ আখনূখ বিন ইয়ারদ বিন মাহলাঈল বিন ক্বাইনান বিন ইয়ানূশ/ আনূশাহ বিন শীস আ. বিন আদম আলাইহিস সালাম।

ইমাম কুরতুবী রহ. তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্হে উল্লেখ করেন, হযরত ইদরীস আ. যেহেতু তাঁর উপর নাযিলকৃত আসমানী গ্রন্হগুলোর দারস তাদরীসে খুব বেশি মশগুল থাকতেন তাই তাঁর নাম রাখা হয় ইদরিস। তাঁর মূল নাম ‘আখনূখ’ ছিল। আর তিনি হযরত নূহ আ.-এর পরদাদা ছিলেন বলে বংশবিশারদগণ যে কথা বলেছেন, তা কেবল ধারণা মাত্র।

ইমাম কুরতুবীর বর্ণনা অনুযায়ী ইদরিস আ. নূহ আ.-এর পূর্বেকার নবী ছিলেন না, বরং পরের নবী ছিলেন। কারো কারো মতে হযরত ইদরিস আ. বনী ইসরাঈলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। (সূত্র - আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া)

যদিও ঐতিহাসিক অনেক বর্ণনার আলোকে ইদরিস আ. নূহ আলাইহিস সালামের পূর্বের নবী হওয়াটাই সুপ্রশিদ্ধ। বাকি আল্লাহ তা'লাই ভালো জানেন।

★ হযরত ইদরিস আ.-এর ব্যাপারে কুরআনের বর্ণনাঃ

আল্লাহ বলেন; وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِدْرِيْسَ إِنَّهُ كَانَ صِدِّيقًا نَّبِيًّا، وَرَفَعْنَاهُ مَكَاناً عَلِيّاً- ‘তুমি এই কিতাবে ইদরীসের কথা আলোচনা কর। নিশ্চয়ই তিনি ছিলেন সত্যবাদী ও নবী’। ‘আমি তাকে উঁচু মর্যাদায় উন্নীত করেছিলাম’ (সূরা মারিয়াম ১৯/৫৬-৫৭)

সূরা মারিয়ামে হযরত ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক্ব, ইয়াকূব, হারূণ, মূসা, যাকারিয়া, ইয়াহ্ইয়া, ঈসা ইবনে মারিয়াম ও ইদরীস (আলাইহিমুস সালাম)-এর আলোচনা শেষে আল্লাহ তা'লা বলেনঃ

‘এঁরাই হলেন সেই সকল নবী, যাদেরকে নবীগণের মধ্য হতে আল্লাহ তা'লা বিশেষভাবে অনুগৃহীত করেছেন। এঁরা আদমের বংশধর এবং যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম তাদের বংশধর এবং ইবরাহীম ও ইসরাঈল (ইয়াকূব)-এর বংশধর এবং যাদেরকে আমি (ইসলামের) সুপথ প্রদর্শন করেছি এবং (ঈমানের জন্য) মনোনীত করেছি তাদের বংশধর। তাদের কাছে যখন দয়াময় আল্লাহর আয়াত সমূহ পাঠ করা হত, তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন এবং ক্রন্দন করতেন।(সূরা মারিয়াম ১৯/৫৮)

উল্লেখ্য যে, পবিত্র কুরআনে হযরত ইদরীস আ.সম্পর্কে সূরা মারিয়াম ৫৬, ৫৭ নং এবং সূরা আম্বিয়া ৮৫ নং আয়াতে বর্ণনা রয়েছে।

★ হাদিসের বর্ণনায় হযরত ইদরিস আ.ঃ

মি‘রাজের হাদীসে উল্লেখ আছে যে, যখন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের সাথে ১ম আসমানে আদম (আ.)-এর সাক্ষাৎ হয়, তখন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেন, مرحبا بالابن الصالح والنبى الصالح ‘নেককার সন্তান ও নেককার নবীর জন্য সাদর সম্ভাষণ’। অতঃপর ৪র্থ আসমানে হযরত ইদরীস (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামকে বলেন, مرحبا بالاخ الصالح والنبى الصالح ‘নেককার ভাই ও নেককার নবীর জন্য সাদর সম্ভাষণ’

( ছহীহ মুসলিম শরীফ / তাফসীরে কুরতুবী )

★ হযরত ইদরিস আ.-এর জন্ম ও মৃত্যুঃ

হুকামাদের বর্ণনা অনুযায়ী ইদরিস আ. মিসরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ওখানে শৈশব কাটান। তাদের কেউ কেউ বলেন ; তিনি বাবেল শহরে কন্মগ্রহণ করেন এবং এখানেই শৈশব অতিক্রম করেন। অতপর তিনি নবুওত প্রাপ্ত হয়ে হযরত আদম আ. এবং শীস আ.-এর শরীয়তের প্রতি মানুষকে ফিরিয়ে আনতে লাগলেন। তখন অবাধ্য লোকেরা তাঁর বিরোধিতায় লেগে যায় এবং তাঁকে জন্ম ভূমি ত্যাগে বাধ্য করে। ফলে তিনি তাঁর অনুসারীদেরকে নিয়ে মিসরে প্রবেশ করেন এবং ওখানে দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন।

তিনি এক আল্লাহর ইবাদত এবং নেক আমলের প্রতি মানুষকে আহবান করতেন। নামাজ, রোযা, ইনসাফ কায়েম, যাকাত প্রদান এবং দুনিয়া বিমুখতার প্রতি মানুষকে নির্দেশ দিতেন। তাছাড়া আল্লাহর দীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদের ব্যাপারে অনুসারীদেরকে উদ্বুদ্ধ করতেন।

(সূত্র- মাআল আম্বিয়া ফিল কুরআনিল কারীম)

জীবনের শেষ সময়ে ইদরিস আলাইহিস সালামকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং ওখানেই তাঁর ওফাত হয়। সূরা মারইয়ামের ৫৭ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস রা. বলেন ; হযরত ইদরিস আ.কে ষষ্ঠ আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং ওখানেই তাঁর মৃত্যু দেয়া হয়। বুখারী ও মুসলিমে চতুর্থ আসমানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং এটাকেই ইমাম ইবনে কাসীর রহ. বিশুদ্ধ বলেছেন। (সূত্র- আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া)

উল্লেখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম হাসান বসরী রহ. বলেন; হযরত ইদরিস আ.কে জান্নাতে উঠানো হয় এবং তাঁর চাহিদানুযায়ী ওখানেই তাঁর ওফাত প্রদান করা হয়। (এব্যাপারে আল্লাহ তা'লাই ভালো জানেন।)

আল্লাহপাক মহান পয়গাম্বর হযরত ইদরিস আ.-এর মর্যাদাকে আরও বুলন্দ করুন। আমীন।

লেখক, মাওলানা আহমদ কবীর খলীল

শিক্ষক, জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা, সিলেট

1 টি মন্তব্য